প্রথমেই বলে রাখি বিটকয়েন আমাদের দেশে সম্পূর্ণ অবৈধ করা হয়েছে। অবৈধ করার বেশ কয়েকটি কারণও রয়েছে। তবে বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই এর লেনদেন দেন বৈধতা দিয়েছে। বিটকয়েনের নাম প্রায় সবারই জানা রয়েছে। বিশেষ করে যারা অনলাইন ভিত্তিক কাজ করে থাকে তারা অবশ্যই জানেন। 2019 সালের পর বিটকয়েনের দাম যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, উক্ত কারণে কমবেশী সবাই এ বিষয়ে কিছুটা হলে ধারণা লাভ করতে পেরেছে। আজকে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব বিটকয়েন কি, কিভাবে কাজ করে এবং ব্যবহারের নিয়ম কানুন সম্পর্কে।
বিটকয়েন কি
বিটকয়েন হচ্ছে একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি। এটি সম্পূর্ণ অনলাইন ভিত্তিক লেনদেন করা হয়। বাস্তবিক এর কোন দ্রব্য নেই। সম্পূর্ণভাবে peer -to- peer ট্রানজাকশন এর মাধ্যমে লেনদেন হয় । সাতোশি নামক এক ব্যক্তি 2008 সালে তৈরি করেন বিটকয়েন। আমরা যে ধরনের পেপাল বা পেওনিয়ার মাস্টার কার্ড গুলো ব্যবহার করে থাকি সেগুলো নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন মেনে লেনদেন করা হয়। এক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড যা দিয়ে নির্দিষ্ট ব্যাঙ্ক অথবা বুথ থেকে উত্তোলন করা যায়। বিটকয়েন লেনদেন এর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে কোন নিয়ন্ত্রন ছাড়াই খুব সহজেই ট্রানজেকশন করা সম্ভব হয়। কোন ধরনের বাধা বা নিয়মের বেড়াজালে আটকে যায় না। ব্যবহারে কোন লিমিটেশন নেই। যখন এ ডাটা প্রেরণ করা হয় তখন এরমধ্যে লেনদেনগুলো একটি ব্লকচেইন এ অটোমেটিক ভাবে লিখতে থাকে, যা সাধারণ ব্যাংকের খতিয়ানের মত কাজ করে নেয়। সাধারণত এটি বিটকয়েন দ্বারা গঠিত সকল লেনদেনের রেকর্ড জমা রাখে। তবে বিটকয়েন এ রয়েছে সুনিদৃষ্ট লিমিট। সারাবিশ্বে মিলে এর সংখ্যা 21 মিলিয়ন পর্যন্ত বিটকয়েন পাওয়া যাবে । এর থেকে বেশি তৈরি করা সম্ভব নয়। সবচেয়ে অবাক বিষয় হচ্ছে ব্লকচেইন সারা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে, কিন্তু এটি কোন কোম্পানি বা থার্ড পার্টি দ্বারা নিয়ন্ত্রণ হয় না। সম্পূর্ণ অটোমেটিক ভাবে নিজে নিজেই এর কাজ করে থাকে। যে কেউ ব্লক চেইনের অংশ হতে পারবে।
যেভাবে বিটকয়েন কাজ করে
অনেকে মনে করেন যে অনলাইনে ভার্চুয়াল মাস্টার কার্ডের মত বিটকয়েন কাজ করে থাকে। মোটেও তা নয়। তোমার নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না। সম্পূর্ণ মুক্ত পেমেন্ট নেটওয়ার্ক হচ্ছে বিটকয়েন। এ পদ্ধতি তৈরির মূল উদ্দেশ্য ছিল ইন্টারনেট ব্যবহারের ডিসেন্টালাইজড পেমেন্ট ব্যবস্থা করা। যার আদান প্রদান এবং রেকর্ডিং অটোমেটিক ভাবে ঘটে থাকে ব্লকচেইনের মাধ্যমে।
তবে মাইনিং রিগ নামক একটি স্পেশাল কম্পিউটার প্রতিদিন এসকল লেনদেনের রেকর্ড এবং তথ্য ভেরিফাই করে। তবে বর্তমান সময়ে যে হারে বিটকয়েনের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে এতে করে আরো শক্তিশালী কম্পিউটার প্রয়োজন মাইনিং বৃদ্ধি করতে। 2009 সালের তুলনায় বর্তমানে এর মাইনিং এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় 12 ট্রিলিয়ন গুণ। মূল বিষয় হচ্ছে কম্পিউটারের পাওয়ার ব্যবহার করে মাইনিং এর মাধ্যমে বিটকয়েন মাইন করা হয়। যেসকল কম্পিউটারের মালিক মাইন করে থাকে তাদেরকে মাইনার বলা হয়। বিটকয়েনকে সহযোগিতা করার কারণে তারা নির্দিষ্ট হারে বিটকয়েন পায়। কিন্তু বর্তমানে এতে তেমন কোনো লাভ হচ্ছে না। বিটকয়েনের ক্ষুদ্রতম একটি অংশ হচ্ছে সাতোশি। এটি খুব সহজে অনলাইন একাউন্টের মাধ্যমে ট্রানজেকশন করা যায়। এখন পর্যন্ত তিন মিলিয়ন বিটকয়েন অবশিষ্ট রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে 2040 সালের মধ্যে মাইনিং করা শেষ হয়ে যাবে। তারপর থেকে হয়তো বিটকয়েন নতুন করে আর তৈরি হবে না। মাইনি ং পদ্ধতি বন্ধ হয়ে যাবে, কিন্তু ট্রানজেকশন হতেই থাকবে।
বিটকয়েনের মূল্য
সুনির্দিষ্ট কোন মূল্য নেই এর। বিভিন্ন সময়ে এর দাম পরিবর্তন হয়। কখনো দাম বৃদ্ধি পেয়ে উচ্চমূল্য হয় আবার কখনো দাম একদম কমে যায়। সময়ের পরিবর্তনের সাথে এর দামও পরিবর্তনশীল। তবে 2018 সালের পর এর মূল্য অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান সময়ে 2021 সালে এর মূল্য দাঁড়িয়েছে 40 লক্ষ টাকার বেশি। যা কয়েক বছর আগেও 5 থেকে 7 লাখ এর ভিতরে অবস্থান করতো। বিটকয়েনের সংক্ষিপ্ত নাম হচ্ছে BTC.