সরকারের দায়িত্ব হলো নীতি সহায়তার

সরকারের দায়িত্ব হলো নীতি সহায়তার মাধ্যমে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যকে সহজতর করা যাতে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে উৎসাহিত

হয়। কিন্তু কখনো কখনো এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হলে ব্যবসা সহজের পরিবর্তে কঠিন হয়ে পড়ে। এবারের বাজেটে এমন

কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

2022-23 অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কর্পোরেট সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। এর মাধ্যমে টানা তিন অর্থবছরে কর কমানো

হয়েছে। নতুন বাজেটে তালিকাবিহীন করপোরেট ট্যাক্সের হার সাড়ে ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ করার

প্রস্তাব করা হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা প্রথমে খুশি হলেও পরে হতাশ ও ক্ষুব্ধ হন। বাজেট ঘোষণার পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) জারি করা

আদেশে বলা হয়, কম হারে করপোরেট ট্যাক্সের সুবিধা পেতে হলে শর্ত মানতে হবে। তা না হলে আগের হারে কর দিতে হবে।

এর আগে দুবার নিঃশর্তভাবে কর্পোরেট কর ছাড় দেওয়া হলেও এবার কঠিন শর্তে দেওয়া হয়েছে।

তবে এসব শর্তের বিরোধিতা করে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, সরকার এর মাধ্যমে ‘ক্যাশলেস লেনদেন’ (নগদবিহীন লেনদেন) চালু

 

করতে যাচ্ছে, যা বাংলাদেশের বাস্তবতার আলোকে সম্ভব নয়। বাজেটের এই উদ্যোগ কার্যকর হলে দেশে ব্যবসা করা কঠিন হবে।

প্রস্তাবিত বাজেটে শর্ত দেওয়া হয়েছে: সব ধরনের প্রাপ্তি ও আয় ছাড়াও 12 লাখ টাকার বেশি ব্যয় ও বিনিয়োগ ব্যাংকের মাধ্যমে

লেনদেন করতে হবে। যে সংস্থাগুলি এই প্রয়োজনীয়তা মেনে চলে না তারা কর ছাড় পাবে না। কোম্পানি ছোট হোক বা বড় হোক

সবার জন্য এই শর্ত প্রযোজ্য।

বাজেটে এমন উদ্যোগের কারণ হিসেবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, অর্থনীতিতে

নগদ লেনদেনের প্রাধান্য রাজস্ব আদায়ের অন্যতম বাধা। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির মাধ্যমে নগদ লেনদেন হ্রাস করলে রাজস্ব

আদায় বৃদ্ধির পাশাপাশি সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে। ‘

তবে এনবিআরের এ যুক্তির সঙ্গে একমত নন ব্যবসায়ীসহ বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নগদবিহীন লেনদেনের উদ্যোগ বাস্তবসম্মত নয়। কারণ এখানকার অর্থনীতির 75 শতাংশ

ক্ষুদ্র ও মাঝারি, যার একটি বড় অংশ নগদ লেনদেন। সেটা ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে। তাদের পক্ষে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে বা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সমস্ত লেনদেন করা সম্ভব নয়।

এছাড়া দেশে এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য যে ধরনের অবকাঠামো প্রয়োজন তা এখনো পুরোপুরি গড়ে ওঠেনি। তাই বাজেটে দেওয়া প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে ব্যবসায়ীদের সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই বেশি হবে।

ব্যবসায়ীরা আরও বলেন, ছোট-বড় প্রতিষ্ঠানের নগদ লেনদেনের সীমা এক হতে পারে না। বড় প্রতিষ্ঠানে বেশি লেনদেন হয়,

এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে ছোট প্রতিষ্ঠানকে যে শর্ত দেওয়া হয়েছে, বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকেও সেই শর্ত মানতে হবে;

যা অযৌক্তিক ও অবাস্তব।

ব্যবসা সহজ বা কঠিন
যোগাযোগ করা হলে ফরেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি রূপালী চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, এটা না

হলে দেশের কোনো কোম্পানি টিকে থাকবে না। ক্যাশলেস সোসাইটি চালু করা এত সহজ নয়। ‘

মোদি সরকারের প্রথম মেয়াদে ক্যাশলেস বা নোট বাতিলের চেষ্টা করা হলেও ব্যাপক সমালোচনার মুখে পিছু হটতে বাধ্য হন

তিনি। এবারের বাজেটে সেই পথে হাঁটার ইঙ্গিত দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

 

বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, “কর্পোরেটরা ছাড় দিয়েছে। ছাড়ের চেয়ে নেওয়া ব্যালেন্স অর্থমন্ত্রীর পক্ষে বেশি।”

অর্থমন্ত্রী নতুন বাজেটে আরেকটি পদক্ষেপের কথা বলেছেন, যা বাস্তবায়ন হলে ব্যবসায়ীদের আরও হয়রানির শিকার হতে হবে।

বাজেট প্রস্তাবে বলা হয়েছে, কোম্পানিটি আয়করের বকেয়া পরিশোধে ব্যর্থ হলে গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে।

এটিও স্থানীয় ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা সম্প্রদায়ের কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছে।

এনবিআরের সাবেক সদস্য আমিনুর রহমান বলেন, “কর্পোরেট ট্যাক্সের হার কমানোর প্রস্তাব একটি প্রতারণা। এটি বাস্তবায়িত

হলে কোম্পানির কর আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’

কর বিভাগ এখনো স্বচ্ছ নয় বলে মনে করেন তিনি। ‘আন্ডারহ্যান্ড’ লেনদেন ছাড়া ব্যবসা করা যায় না। এসব কাজের কোনো বিল-

ভাউচার নেই। যদি তাই হয় তবে ব্যবসায়ীরা কীভাবে ব্যাংকিং চ্যানেলে এই ব্যয়গুলি দেখাবেন? করপোরেট ট্যাক্স কমিয়ে দিলে

কোম্পানির কোনো লাভ হবে না। বরং বাণিজ্য আরও কঠিন হবে।

গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা কোনো আইন হতে পারে না। ১০০ জনের মধ্যে দুইজন খেলাপি

হলে সেটা মোটেও খারাপ কিছু নয়।

স্নেহাশীষ বড়ুয়া (এফসিএ) বলেন, ‘আমাদের দেশে এখনও বেশিরভাগ লেনদেনই অনানুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক।

একটি বড় প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ছোট লেনদেন করা সম্ভব হতে পারে

 

আরো নতুন নতুন চাকরির খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন

About admin